• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই মে, ২০২৪ ইং
সন্ধান করি শবেকদর এর মহিমান্বিত রাত

মুফতি অহিদুল আলম

পবিত্র রমজানে গুরুত্বপূর্ণ রাত শবে কদর। এই রাত রমজান মাসে হওয়ায় এই মাসের গুরুত্ব বহু অংশে বেড়ে যায়। ‘শব’ ফারসি শব্দ, অর্থ রাত বা রজনী। আর কদর মানে সম্মান, মর্যাদা, ভাগ্য ইত্যাদি। শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদরের আরবি হলো ‘লাইলাতুল কদর’ বা সম্মানিত রাত।
পবিত্র কোরআন নাজিল ও কদর হওয়ায় এই রাতের মর্যাদা বেড়ে গেছে। কোরআন নাজিল হয়েছে রমজানের এই মূল্যবান রাতে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রমজান মাস! যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে মানবের দিশারি ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনরূপে।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)
শবে কদরের মর্যাদা বুঝাতে গিয়ে আল্লাহতায়ালা একটি সূরা নাজিল করছেন। সূরাটির নাম ‘কদর’ রেখেছেন। সূরাটি মাক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরায় আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনীতে। আপনি কি জানেন, মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষা পর্যন্ত।’
শবে কদর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ রাত। যা উম্মতে মুহাম্মদির জন্য। আল্লাহ অন্য কোনো নবীর উম্মতদের এত মর্যাদাপূর্ণ রাত দেননি। কিন্তু শবে কদরের রাতটি কবে বা কত তারিখ তা গোপন করে রাখা হয়েছে। শবে কদরের রাত কেন গোপন রাখা হয়েছে? এ ব্যাপারে হজরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) আমাদের শবে কদরের নির্দিষ্ট তারিখ জানানোর জন্য বাহির হলেন। তখন দুজন মুসলমানের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছিল। রাসুল (সা.) বলেন, আমি তোমাদের শবে কদরের নির্দিষ্ট তারিখ জানানোর উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম। কিন্তু ওমুক দুই লোকের মাঝে ঝগড়া হচ্ছিল। তাই তা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। হয়তো তা উঠিয়ে নেওয়ার মধ্যেও কোনো কল্যাণ রয়েছে…। (বুখারি)
রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে তা অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছে। তাই ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ এর রাত সমূহে শবে কদর তালাশ করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদরকে সন্ধান কর।’ (মুসলিম)।
বুখারি শরিফে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাত জেগে ইবাদত করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। শবে কদরের রাতে ইবাদতকারীরা সৌভাগ্যবানদের কাতারে শামিল করবে। এই রাত আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য বিশেষ উপহার। এ জন্য শবে কদর লাভ করার জন্য ইতেকাফের বিকল্প নেই। রাসুল (সা.) প্রতি রমজানে ইতেকাফ করতেন। আসুন রমজানের শেষ দশকের সময়টুকু আমলে কাটিয়ে দেই। তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলিল মাসজিদ, আউওয়াবিন, সালাতুত তাসবিহ, কাজা নামাজ, সালাতুল হাজাত, শোকরিয়া আদায় ও তাহাজ্জুদের নামাজসহ অতিরিক্ত নফল নামাজ আদায় করি। নামাজ আদায়ে ব্যস্ততা দেখাব না। কোরআন তেলওয়াত করা, দরুদ শরিফ পড়াসহ ক্ষমা চাওয়ার জন্য অধিক পরিমাণে তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু ও শিক্ষকদেরসহ সবার জন্য। নিজ দেশর ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া করা জরুরি। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব? রাসুলু(সা.) বলেন, তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (ইবনে মাজা)

লেখক : প্রিন্সিপাল, মাদ্রাসা ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।