• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
করোনায় পুরুষের মানষিক স্বাস্থ্য

ছবি প্রতিকী

কভিড-১৯ প্রতিনিয়ত আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ওপর বিভিন্নমুখী প্রভাব ফেলছে। নতুন নতুন গবেষণার ফলে প্রতিদিন এর নতুন নতুন রূপও আমাদের সামনে আসছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা দেখিয়েছে, মহামারী পুরুষদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলেছে। গবেষণাটিতে দেখা হয়েছে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব কীভাবে পুরুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য থেকে তাদের দৈনন্দিন স্বাস্থ্যজনিত আচরণের ওপর প্রভাব ফেলেছে।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের এ সার্ভে দলটি নিজেদের জরিপে যুক্ত করেছে এক হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে। যাদের বয়স ১৮ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি। তারা দেখেছে, ৭৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছে, মহামারী চলাকালে তাদের উদ্বেগের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে ৫৯ শতাংশ বলেছে, তারা বিচ্ছিন্ন অনুভব করেছে। প্রায় ৪৫ শতাংশ বলেছে, তাদের আবেগজনিত ও মানসিক স্বাস্থ্য এ কঠিন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ গবেষণায় দেখা গেছে, অতীতের সংকটগুলোর চেয়ে কভিড-১৯ মহামারী প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ওপর অনেক বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যেখানে ৫৯ শতাংশ বলেছে, কভিড-১৯ ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার চেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। পাশাপাশি অসুস্থ রোগীদের মেডিকেল ও মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসার জন্য দ্বারস্থ হওয়ার বিষয়টি কতটা বিরল এখানে তাও দেখানো হয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, ৬৬ শতাংশ  অংশগ্রহণকারী পুরুষ জানিয়েছে, কভিড-১৯ মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কতটা প্রভাব ফেলেছে তা নিয়ে তারা কদাচিৎই আলাপ করেছে। ৪৮ শতাংশ বলেছে, তারা কভিড-১৯ ছাড়া অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতা নিয়ে ডাক্তার দেখানো বন্ধ করে দিয়েছে।

অবশ্য সবটাই কেবল দুঃসংবাদ না। ৪৫ শতাংশ পুরুষ মনে করে তারা মহামারীর আগের সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সুস্বাস্থ্যসম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ২৮ শতাংশ অনেক বেশি ঘুমিয়েছে এবং ২২ শতাংশ তাদের রুটিনে ব্যায়ামের সময় বাড়িয়েছে। ১৯ শতাংশ বলেছে, তারা স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েছে।

আমেরিকান পুরুষদের ওপর কভিড-১৯ কীভাবে প্রভাব ফেলছে

এ জরিপে যুক্তরাষ্ট্রের পুরুষদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। অন্যান্য ডেমোগ্রাফিক গোষ্ঠীর মতো আমেরিকানরা আবার একমাত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী নয়। কভিড-১৯ তাদের ওপর বৈচিত্র্যময় মাত্রায় প্রভাব ফেলেছে।

ডাক্তার পিটার বাজিক বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অবগত করার ক্ষেত্রে পুরুষরা অধিক সমস্যায় ভোগে, যা কিনা পরে তাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। আমি সব পুরুষকে উৎসাহিত করছি তাদের বাবা-মার সঙ্গে এবং তাদের কাছের মানুষের সঙ্গে কথা বলার জন্য।

ড. মাইকেল ইয়ং বলেন, ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের জরিপে তিন-চতুর্থাংশের বেশি পুরুষ উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগছে এবং প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা বলেছে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য এই মহামারীতে খুব বাজে রূপ ধারণ করেছে। এটা ক্লিনিক্যাল অনুশীলনে যা দেখা গেছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূূর্ণ।

বাজিক বলেন, যখনই কোনো পুরুষের কাছে তাদের স্বাস্থ্য ও চাপের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়, তারা নিজেদের স্বাস্থ্যের চেয়ে অর্থনৈতিক সমস্যা ও পরিবারের মঙ্গলকে এগিয়ে রাখে।

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, অনেক দিক থেকে এটা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইস্যু। অনেক পুরুষ নিজেদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ হিসেবে দেখে। তারা এজন্য উদ্বেগে থাকে যে যদি তাদের নিজেদের কোনো সমস্যা হয় তবে তারা পরিবার ও সম্প্রদায়ের প্রতি নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারবে না।

ইয়ং আরো যোগ করে বলেন, কভিড-১৯-এর যুগে ঘরে বসে কাজ করা এবং আইসোলেশনে থাকা পুরুষকে তাদের প্রচলিত কিছু পারিবারিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, অনেক পুরুষ তাদের নতুন ও ভিন্ন দায়িত্ব নিয়ে সংগ্রাম করছে, যেমন শিশুদের প্রতি অধিক যত্ন নেয়া, তাদের দূরশিক্ষণে সাহায্য করা এবং অন্যান্য দায়িত্ব পালন করা। তাছাড়া আয় কমে যাওয়া এবং বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক স্থবিরতাকে ঘিরে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তাও পুরুষের উদ্বেগের স্তরকে বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় একটি ভূমিকা রেখেছে।

ইয়ং আরো বলেন, সামাজিক নেটওয়ার্কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে আইসোলেশন যেমন কাজের ক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা হওয়া, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা না হওয়াও একাকিত্বের অনুভূতিকে ত্বরান্বিত করে। এটি একটি পরিচিত সমস্যা, যা মানসিক ও শারীরিক উভয় সমস্যাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে ।

কেন অনেক পুরুষ চিকিৎসা নেয় না?

বেজিক ও ইয়ং দুজনই বলছেন, এটা মারাত্মক সমস্যার ব্যাপার যে অনেক পুরুষ হাসপাতালে যাওয়া এবং মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সেবা নেয়া এড়িয়ে যাচ্ছে।

বাজিক বলেন, পুরুষ সম্পর্কে যে জানে, সে জানে পুরুষরা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার ব্যাপারে খুব একটা পটু না। এটা এমন কিছু যা আমরা দেখেছি এ সার্ভে শুরু করার কারণ হিসেবে। লক্ষ্য ছিল স্বাস্থ্য বিষয়ে পুরুষের আচরণকে বুঝতে পারা।

ইয়ং বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক পুরুষের মাঝে দুর্বলতার চিহ্ন হিসেবে হতাশা ও উদ্বেগ দেখা গেছে। তাছাড়া পুরুষকে শক্ত দেখানো এবং দুর্বল না দেখানোর সাংস্কৃতিক চাপও পুরুষের চিকিৎসা না নেয়াকে প্রভাবিত করে।

তিনি আরো বলেন, পুরুষ যে লজ্জা ও অপরাধবোধকে অনুভব করে তা দূর করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে এ ধারণাটাও বদলানো প্রয়োজন যে সাহায্য চাওয়া শক্তির চিহ্ন, দুর্বলতার না। এর ফলে প্রয়োজনের সময় পুরুষেরা আরো বেশি সাহায্য চাইবে।

সমাধানে কী আছে?

যখন জিজ্ঞেস করা হয় যে কী সমাধান আছে, বাজিক বলেন, কভিড-১৯-এর কঠিন এ সময়ে আপনার হেলথ টিমের সঙ্গে নিরাপদে যুক্ত হওয়ার জন্য টেলিমেডিসিন সহজেই প্রবেশযোগ্য ও কম ভীতিজনক উপায়।

অনেক মানুষ প্রাথমিকভাবে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে পুরোপুরিভাবে বলে না যে তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে কী সমস্যা বোধ করছে। তখন তারা হয়তো সরাসরি ডাক্তার দেখাতে লজ্জা পায় কিংবা মহামারীতে মেডিকেল সহায়তার জন্য যেতে ভয় পায়। তবে বাসা থেকে ফোন কিংবা ভার্চুয়াল সাক্ষাৎ হতে পারে নিজের স্বাস্থ্য সমস্যাকে ডাক্তারের কাছে তুলে ধরার একটি সূচনা।

গবেষণা দেখাচ্ছে, যখন ৭০ শতাংশ মানুষ সুরক্ষাকবচ হিসেবে মাস্ক পরছে, কিন্তু ৩০ শতাংশ এ উপায়কে গ্রহণ করছে না। আবার ৫১ শতাংশ ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী বলছে, তারা মানুষের বড় ভিড় এড়িয়ে চলেছে।

বাজিক মনে করেন, এসব মেনে চলা আবার অভিজ্ঞতার ওপরও নির্ভর করে। পুরুষদের মাঝে যারা বিয়ে করেছে এবং যাদের ১৮-এর কম বয়সী সন্তান আছে, তারা কভিড-১৯-কে আরো বেশি সতর্কতার সঙ্গে গ্রহণ করে।

হেলথলাইন থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।