• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
কবি বেগম সুফিয়া কামালের জন্মদিন আজ

ছবি - কবি বেগম সুফিয়া কামাল

তিনি নারী জাগরণের অগ্রদূত, আবার তিনি আমাদের জননী সাহসিকা। তিনি কবি বেগম সুফিয়া কামাল। প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণের এই স্বপ্নদ্রষ্টার ১০৯তম জন্মদিন আজ।

এই মহীয়সী নারী আজীবন সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।

এই বাংলার আকাশ-বাতাস/এই বাংলার ভাষা/এই বাংলার নদী, গিরি-বনে/বাঁচিয়া মরিতে আশা – মনের মাঝে দেশাত্মবোধ জাগানিয়া এমন চরণের রচয়িতা কবি বেগম সুফিয়া কামালের জন্ম ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদের রাহাত মঞ্জিলে। পিতা সৈয়দ আবদুল বারী ও মায়ের নাম সৈয়দা সাবেরা খাতুন।

সুফিয়া কামাল ছিলেন আবহমান বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি এবং দীপ্ত সংগ্রামী।১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এই আন্দোলনে নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে শিশু সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন।

পাকিস্তান সরকার ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র সঙ্গীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন এবং তিনি ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন।

১৯৭০ সালে তিনি মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেন। তিনি পাকিস্তানের পক্ষে স্বাক্ষর দান প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দুদিন আগে তিনি প্রেসিডেন্ট হাউসে ইয়াহিয়া খানের সাথে বৈঠকে যে যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য রেখেছিলেন। তাঁর মানসিক দৃঢ়তার পরিচয়ে স্বয়ং ইয়াহিয়া খানকে পর্যন্ত বিস্মিত করেছিল।

স্বাধীন বাংলাদেশে নারী জাগরণ ও নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন।

কবির জন্মদিন উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশ, প্রকৃতি, গণতন্ত্র, সমাজ-সংস্কার, নারীমুক্তি এবং শিশুতোষ রচনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বেগম সুফিয়া কামালের লেখনী আজও পাঠককে আলোড়িত ও অনুপ্রাণিত করে।’

তিনি বলেন, ‘কবি বেগম সুফিয়া কামালের সৃজনশীলতা ছিল অবিস্মরণীয়। দেশ, প্রকৃতি, গণতন্ত্র, সমাজ-সংস্কার, নারীমুক্তি এবং শিশুতোষ রচনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর লেখনী আজও পাঠককে আলোড়িত ও অনুপ্রাণিত করে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামসহ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তাঁর প্রত্যক্ষ উপস্থিতি তাঁকে জনগণের ‘জননী সাহসিকা’ উপাধিতে অভিষিক্ত করেছে।’

সুফিয়া কামালের জীবনের দিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে। ১৯১৮ সালে মায়ের সাথে যখন প্রথম কলকাতায় যান তিনি, তখন তার পরিচয় হয় বেগম রোকেয়ার সাথে। বেগম রোকেয়ার দর্শন, নারী জাগরণের মনোভাব এবং সাহিত্যানুরাগ ভীষণভাবে নাড়া দেয় শৈশবের সুফিয়াকে।

কলকাতায় তার আরেকজন বিশেষ ব্যক্তির সাথে পরিচিতি ঘটে যিনি সুফিয়া কামালের কবি জীবন পরবর্তীকালে অনেকটাই পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। তিনি হলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি সুফিয়া কামালের কবিতা পড়ে বিশেষভাবে মুগ্ধ হন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁঝের মায়া’র মুখবন্ধ লিখেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

সাঁঝের মায়া, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। এ ছাড়া সোভিয়েতের দিনগুলি এবং একাত্তরের ডায়েরী তার অন্যতম ভ্রমণ ও স্মৃতিগ্রন্থ।

সুফিয়া কামাল দেশ-বিদেশের ৫০টিরও বেশী পুরস্কার লাভ করেছেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কার, সোভিয়েত লেনিন পদক, একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ও স্বাধীনতা দিবস পদক এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ।

সুফিয়া কামালের কবিতা চীনা, ইংরেজি, জার্মান, ইতালিয়ান, পোলিশ, রুশ, ভিয়েতনামিজ, হিন্দি ও উর্দু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর ৮৯ বছর বয়সে ঢাকায় কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলাদেশি নারীদের মধ্যে তাকেই প্রথম পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

ডিসেম্বর ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« নভেম্বর    
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।