• ঢাকা
  • রবিবার, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মে, ২০২৪ ইং
কোভিড ১৯ থেকে রক্ষা পেতে ভিটামিন ডি হতে পারে অন্যতম প্রতিরোধ মূলক হাতিয়ার

ছবি-ডাঃ মোহাম্মদ আহাদ হোসেন, কনসালটেন্ট কুরমিটোলা জেনারেল হাসপাতাল

কোভিড ১৯ থেকে রক্ষা পেতে ভিটামিন ডি হতে পারে অন্যতম প্রতিরোধ মূলক হাতিয়ার

ভিটামিন ডি সৌর লোকের ভিটামিন নামে পরিচিত। কারন এটা সূর্যের আলো থেকে আমরা পাই। ক্যালসিয়ামের মাধ্যমে শরীরের হাড় গঠন ও মজবুত শরীর গঠনে এর ভূমিকার কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু ২০০০ সালের শুরুর দিকে শরীরে ভিটামিন ডি এর অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে এবং এখনো গবেষনা চলছে। এরকমই কিছু গবেষণার ফলাফল তুলে ধরার চেষ্টা করছি আজকের লেখায় যা কিনা আমাদের কোভিড ১৯ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এখানে বিষয়গুলো তুলে ধরব তা সবই আন্তর্জাতিক গবেষনার ফলাফল।
বর্তমান সময়ে কোভিড ১৯ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোন প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা এখনো স্বীকৃত হয় নি। বরং কিছু চিকিৎসা যা আগে কার্যকর বলে ধরা হত তা পরবর্তীতে ক্ষতিকর বলে দেখা গেছে। এমতাবস্থায় এই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসাবে কাজে লাগতে পারে। বেশ কিছু ভিটামিন ও Trace elements আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে যা আমাদের ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিছু গবেষনায় দেখা গেছে সম্পূরক ভিটামিন ডি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও Respiratory infection বা শ্বাস তন্ত্রের সংক্রমন থেকে রক্ষা করে। আর কোভিডের ক্ষেত্রে শ্বাস তন্ত্রই মূলত ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

ভিটামিন ডি কিভাবে কোভিড ১৯ থেকে রক্ষা করতে পারেঃ

আরেকটি গবেষনায় দেখা গেছে শ্বাস তন্ত্রের কোষের উপর ভিটামিন ডি এর প্রভাব রয়েছে যা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে শ্বাস তন্ত্রের ইনফেকশন রোধে ভূমিকা রাখে। যে কোন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে ঢুকলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধের অন্যতম উপাদান ম্যক্রোফেজ যা কে আমরা পুলিশ বাহিনীর সাথে তুলনা করতে পারি তারা সক্রিয় হয়ে উঠে।গবেষনায় প্রমানিত হয়েছে ভিটামিন ডি এই ম্যাক্রোফেজকে আরো সক্রিয় করে দেয় যাতে করে তারা দ্রুত রেস্পন্স করে। ভিটামিন ডি ম্যাক্রোফেজ এর পরিপূর্ণ গঠনেও সাহায্য করে ভিটামিন ডি।
ভিটামিন ডি আমাদের শরীরে ক্যাথেলিসিডিন নামক একটি প্রোটিন এর সংখ্যা বৃদ্ধি করে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং আমাদের শ্বাসতন্ত্র কে যক্ষার জীবাণু, বিভিন্ন গ্রাম পজিটিভ , গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের আক্রমন থেকে রক্ষা করে। একটি গবেষনায় দেখা গেছে ভিটামিন ডি এর অভাবে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও এ জাতীয় অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যা পরবর্তীতে এজমা এর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আরেকটি গবেষনায় দেখা গেছে যদি সম্পূরক ভাবে ভিটামিন ডি দেয়া হয় তাহলে Acute Respiratory tract infection বা শ্বাস তন্ত্রের সংক্রমনের হার কমিয়ে দেয়।

বয়স্কদের উপর ভিটামিন ডি এর প্রভাবঃ

বেশ কয়েকটি গবেষনায় দেখা গেছে ভিটামিন ডি বয়স্কদের মৃত্যু হার কমিয়ে দেয় যারা সাধারণত কোভিড ১৯ সহ বিভিন্ন শ্বাস তন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকেন।
তবে এটা মনে রাখতে হবে এরকম কোন প্রমানিত তথ্য নেই যে ভিটামিন ডি আপনাকে কোভিড ১৯ থেকে রক্ষা করতে পারবে। কিন্তু ভিটামিন ডি এর অভাবে আপনার যে কোন ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে এবং আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে যা বিভিন্ন গবেষনায় প্রমানিত।

শিশুদের উপর ভিটামিন ডি এর প্রভাবঃ

বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে দুগ্ধ পোষ্য শিশু থেকে বাড়ন্ত শিশু সকল পর্যায়ে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি রয়েছে। একটি গবেষনায় দেখা গেছে যে সকল শিশু মায়ের দুধ খায় তাদের ভিটামিন ডি এর দৈনিক চাহিদা ৪০০ আন্তর্জাতিক ইউনিট (আইইউ)। কিন্তু তারা যে পরিমান মায়ের দুধ খায় তাতে তাদের ঘাটতি থেকে যায়। এসকল শিশুদের ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণের জন্য ছয় মাস পর ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ ফরমূলা দুধ দেয়ার কথাও বলেছে গবেষণাটি। এছাড়া বাড়ন্ত শিশুর দৈনিক চাহিদা ৬০০ আইইউ যা পূরন করতে হলে তাদের দৈনিক ১০০০ মিলি দুধ খেতে হবে। একারনে তাদেরও ঘাটতি রয়ে যায়। একারনে গবেষনা বলছে তাদেরও ভিটামিন ডি সম্পূরক ডোজ দরকার রয়েছে।

গর্ভবতী মহিলাদের ভিটামিন ডি এর প্রভাবঃ

গর্ভবতী মায়েদের উপর ভিটামিন ডি এর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই গর্ভবতী মায়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। একারনে তাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ সংক্রমনের ঝুঁকিতে থাকেন তারা। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ডি এর দরকার। এছাড়া এদের প্রচুর পরিমান ক্যালসিয়াম দরকার। আর ক্যালসিয়াম শরীরে প্রবেশের জন্য ভিটামিন ডি এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সকল গর্ভবতী মায়েরা ভিটামিন ডি এর অভাবে থাকেন তাদের সন্তানদের জন্মের পর শ্বাস তন্ত্রের ইনফেকশনের ঝুকি বেড়ে যায়।

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারঃ

স্যামন ফিস, টুনা ফিস, দুধ, ডিম, চিজ, ইয়োগারট ইত্যাদি।

কি পরিমান ভিটামিন ডি দরকার প্রতিদিনঃ

কি পরিমান ভিটামিন ডি দরকার সেটা নির্ভর করে রক্তে কি পরিমান ভিটামিন ডি রয়েছে। তবে আমাদের স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি ১০০০ থেকে ৪০০০ আইইউ ভিটামিন ডি সম্পূরক ভাবে দৈনিক খাওয়ার কথা গবেষনায় প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যাদের রক্তে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি রয়েছে তাদের আগে ঘাটতি পূরন করা জরুরী। সেক্ষেত্রে আমরা ২০০০০ আইইউ ভিটামিন ৫ থেকে ৭ দিন দিয়ে পরবর্তীতে নিয়মিতভাবে ১০০০ থেকে ৪০০০ আইইউ ভিটামিন ডি খেতে পারি। বাজারে একাধিক কোম্পানির ভিটামিন ডি রয়েছে। যেমন Vital D , D-Cap, D-Rise . এগুলো ক্যাপসুল হিসাবে পাওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এগুলো মাত্রা ঠিক করে খাওয়া যেতে পারে। এর সাথে অনেক সময় ক্যালসিয়ামও অনেক সময় দরকার হতে পারে। চিকৎসকের পরামর্শ ছাড়া এগুলো সেবন করা সঠিক হবে না। যার যেটা দরকার সে অনুযায়ী চিকিৎসক নির্ধারণ করে দেবেন।
পরিশেষে বলতে চাই কোভিড ১৯ থেকে রক্ষার কোন সুনির্দিষ্ট কোন ঔষধ নাই। সেক্ষেত্রে আমাদের এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ মূলক ব্যাবস্থা গড়ে তোলাই এতে আক্রান্ত হওয়ার আগে এর থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র হাতিয়ার। আর এজন্য আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ বাড়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থা বাড়াতে ভিটামিন ডি কে আমরা বেছে নিতে পারি যার বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল তুলে ধরলাম। সবাই সুস্থ্য থাকুন, ভালো থাকুন- এই প্রত্যাশায়।

ডাঃ মোহাম্মদ আহাদ হোসেন
কনসালটেন্ট
কুরমিটোলা জেনারেল হাসপাতাল

আরও পড়ুন :

##কোভিড রুগীর বাসায় চিকিৎসার একটি পূর্নাংগ নির্দেশনাঃ

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

মে ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« এপ্রিল    
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।