কোভিড - ১৯ পরিস্থিতিতে
ফকির আজমল শাহ্
লালন গীতির নিয়মিত শিল্পী, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন ।
সাধারণ সম্পাদক, ফরিদপুর লালন পরিষদ।
আজীবন সদস্য, লালন একাডেমী কুষ্টিয়া।
সদস্য, জেলা শিল্পকলা একাডেমী ফরিদপুর।
সদস্য, সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থার, ফরিদপুর।
ইন্দ্রজিৎ নিত্যঃ দেশে চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বাউল ও লোকসংগীত শিল্পীদের মারাত্মক মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়ত তারা দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে দিনযাপন করছে। করোনাভাইরাস অর্থাৎ কোভিড-১৯ মহামারী গোটা দেশটাকে সাইক্লোনের মতো তছনজ করে ফেলেছে। লকডাউন- শাটডাউন দিয়েও কোন ভাবে নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না। দেশের সকল মানুষ আতঙ্কে এবং শঙ্কায় আছে। এবারের করোনা ভাইরাস প্রতিনিয়ত ঘূর্ণিঝড়ের মতো দিক পরিবর্তন করছে। দিক পরিবর্তনের সঙ্গে-সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। ফকির আজমল শাহ্ বাউল ও লোকসংগীত শিল্পীদের উদ্দেশ্যে বলেন সবাই সতর্ক থাকব ও প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। করোনাভাইরাস অর্থাৎ কোভিড-১৯ মহামারীর আঘাত শুধু সীমাহীন প্রাণহানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, এলোমেলো করে দিয়েছে স্বাভাবিক জীবিকা নির্বাহের পথও। খাদ্যদ্রব্যের দাম মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে গেছে। এতে আমাদের মতো গরীব শিল্পীদের খরচ আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে।
প্রায় প্রত্যেক শ্রেণী-পেশার মানুষের আয়ের উৎসে ধাক্কা লেগেছে, অনেকেরই জীবিকা নির্বাহের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে শিল্প-সংস্কৃতির সাথে, বিনোদন মাধ্যমের সাথে জড়িত কলাকুশলীরা প্রায় বেকার হয়ে গেছেন। তবে তাদের চেয়েও ভয়াবহ সংকটে আছেন লোকসঙ্গীত ও বাউল ধারার শিল্পী ও কলাকুশলীরা। কোভিড-১৯ মহামারীতে সৃষ্ট সংকটজনক পরিস্থিতিতে এই প্রান্তিক মানুষগুলো চরম অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছে।
লোকসঙ্গীত ও বাউল ধারার শিল্পীরা সহজ-সরল বাউল দর্শনের গল্প শোনাতেন সাধারণ মানুষকে। একইসাথে তাদের তৈরি গান, সুর ও সঙ্গীতের সৃষ্টিশীলতায় সমৃদ্ধ করেছেন আমাদের লোকজ সংস্কৃতির ভান্ডারকে। কিন্তু আজ তাদের প্রবল দুঃসময়, স্বাভাবিক জীবিকা নির্বাহের পথ প্রায় বন্ধ। যুগের পর যুগ ধরে আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চায় লোকগান ও বাউল গানের শিল্পীরা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছেন। একসময় গ্রাম-গঞ্জে সাধারণ মানুষের মনের খোরাক এবং বুকভরে দম নেবার ও জীবনকে সহজ করে উপভোগ করবার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ ছিল সারিগান, শরিয়তি, মারোফতি, দেহতত্ত্ব, বাউল গান, পালাগান, জারিগান, রাই-শ্যামধারা ইত্যাদি লোকসঙ্গীতের নানা ধারার গানের আসর। জগত সংসার বিরাগী এই গানের মানুষেরা মনের আনন্দে গান রচনা করতেন ও গাইতেন।
সরকারী-বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, সরকারী ভাতার আওতার বাইরে থেকে যাওয়া, অন্যদিকে নিরাপত্তাহীনতা নানাবিধ অত্যাচার এবং সামাজিকভাবে হয়রানিতে লোকসংগীত ও বাউল ধারার শিল্পীরা এমনিতেই ছিলেন সংকটের মুখে। এরমধ্যে প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ মহামারী তাদের আরো অসহায় অবস্থায় নিয়ে গেছে। গ্রাম-গঞ্জে লোকসংগীতের আসর একেবারেই কমে গেছে।
সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখার বাধ্যবাধকতার কারণে সব ধরনের অনুষ্ঠান আপাতত বন্ধ আছে, ফলে গ্রাম-গঞ্জে বা শহরাঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে যেসব গানের আসর কিংবা বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে যে সকল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হত, যার মাধ্যমে তাদের গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ ছিল, সেটাও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
বাউল শিল্পী ফকির আজমল শাহ্ বলেন সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে লোকসঙ্গীত ও বাউল ধারার শিল্পী এবং কলাকুশলীদের খুজে বের করে অর্থ ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করা ছাড়া শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখার আর কোন উপায় নেই।
নোটঃ বাউল শিল্পী ফকির আজমল শাহের দেওয়া মতামত ও সাক্ষাতকারটির প্রতিবেদন তৈরী করেছেন ইন্দ্রজিৎ পাল নিত্য শিক্ষা নবীশ আইনজীবী ও উন্নয়ন কর্মী, ফরিদপুর।
প্রতিবেদনটি শিল্পীর অনুমতি ও পরামর্শে প্রকাশিত হলো।