ফরিদপুরের ভাঙ্গায় রোববার বিকালে পৌরসদরের গজারিয়া গ্রামের দুদলের লোকজনের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। ২ ঘন্টাব্যাপি চলা সংঘর্ষে শিশু, নারী-পুরুষ সহ শতাধীক মানুষ গুরুত্বর আহত হয়েছে। আহতদের ভাঙ্গা ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে ভাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে। এসময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে গ্রামবাসিকে ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আনে।
পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ঘটনাাস্থল থেকে ৬ গ্রামবাসিকে আটক করে এবং গ্রাম জুড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষে আহতরা হলো, কৈতরী বেগম, হামিদা বেগম, কুলছুম বেগম, তাছলিমা বেগম, আশা আক্তারী, অবনি, পারুলী বেগম, খালেদা বেগম, ফাতেমা বেগম, দেলোয়ার ফকির, জামাল ফকির, বুলবুল ফকির, এমেলী আক্তার, জোসনা বেগম, রিক্তা আক্তারী, রহিমা বেগম,কালাম ব্যাপারী, রাসেল সেক, সোহেল আহম্মেদ, জামাত আলী, জাকির হোসেন, রাসেল মাতুব্বর, মামুন সেক, বিপ্লব সিকদার, নাজমুল সিকদার, পলাশ মাতুব্বর, সমিউল সেক, সাব্বির হোসেন, বাবুল মাতুব্বর, হানিফ মাতুব্বর, হৃদয় সেক, রাজিব ব্যাপারি, আরব আলী, আপান, ওবায়দুল ইসলাম।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সফিকুর রহমান জানায়, আধিপত্য বিষয় নিয়ে পৌর কাউন্সিলর বাচ্চু মাতুব্বর ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজ্জাক ফকিরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে পরবতর্ীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় বাচ্চু মাতুব্বরের লোকজনের সাথে রাজ্জাক ফকিরের লোকজনের কথা কাটাকাটি হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে উভয় গ্রুপের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সেসময় বেশ কয়েকজন আহত হয় এবং এবিষয়ে রাজ্জাক ফকিরের পক্ষ হতে বাচ্চুর মাতুব্বরের লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। আজ রোববার বাচ্চু মাতুব্বরের লোকজন ফরিদপুর আদালত থেকে জামিনে এসে কয়েকশত লোক দেশী অস্ত্র নিয়ে রাজ্জাক ফকিরের লোকজনের বসত ভিটার উপর অতর্কিত হামলা চালায়।
এসময় রাজ্জাক ফকিরের লোকজন বাধা দিতে চাইলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। ২ ঘন্টাব্যাপি চলা সংঘর্ষে রাজ্জাক ফকিরের লোকজনের অর্ধশত বসত ঘর, ব্লিডিং সহ ঘরের ভেতরে থাকা আসবার পত্র ব্যাপক ভাংচুর করে এবং স্বর্ন, নগত টাকা দামি আসবার পত্র লুটে নিয়ে যায়। রাজ্জাক ফকিরের শতাধীক লোকজন গুরুত্বর আহত হওয়াতে গ্রাম ফাকা হয়ে যায়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাচ্চু মাতুব্বরের লোকজন প্রতিটা টিনের ঘরের চালা, টিভি, ফ্রিজ, বাথরুমের কমড, ব্রেসিং, ওয়াল সোকেজ, আলমারী, খাট, ডাইনিং টেবিল পর্যন্ত ভাংচুর করে। প্রতিটি বাড়িতে ভাংচুরের কারনে প্রায় কোটি টাকা সম্পদ নষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্থরা। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ঘর গুলোকে কুপিয়ে বসবাসের সম্পুর্ন অযোগ্য করে ফেলে সংঘর্ষে লিপ্ত থাকা গ্রামবাসি।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজ্জাক ফকিরের স্ত্রী ঝনার্ বেগম জানায়, আদিম যুুগের মানুষের মত বর্বর আচরন করেছে বাচ্চু মাতুব্বরের লোকজন। অতর্কিত হামলা চালিয়ে শতাধীক বাড়ীর মহিলাদের এলোপাথারী কোপানো সহ কয়েকঘন্টা ধরে লুটপাট করে তারা। পুলিশ সামনে দাড়িয়ে থাকলেও কোন প্রতিবাদ করেনি বরং আমাদের উল্টা ভাষায় গালিগালাজ করেছে। থানা সদর থেকে মাত্র ৫ মিনিটের দুরত্ব আমাদের গ্রাম অথচ পুলিশ দেরীতে আসা সহ কোন ধরনে প্রতিবাদ পর্যন্ত করল না।
এব্যাপারে বাচ্চু মাতুব্বরে জানায়, আমার লোকজন জামিনে এসে বাড়ী ফিরতে ছিল তখন রাজ্জাক ফকিরের লোকজন খারাপ কথা বলায় সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় আমার পক্ষের ৮/১০ জন লোক আহত হয়েছে।
বাচ্চু মাতুব্বরের লোকজনের ভাংচুরের শিকার বসত ঘর গুলো হলো, রাজ্জাক ফকির, সোহেল ফকির, আনোয়ার ফকির, ইব্রাহীম ফকির, ছিদ্দিক মাতুব্বর, আনসার মাতুব্বর, আমির সিকদার, চান মিয়া সিকদার, জাহাঙ্গির সিকদার, শাহীন সিকদার, শামীম সিকদার, বিপ্লব সিকদার, ওসমান সিকদার, কালাম ব্যাপারী, বাসার ব্যাপারী, ভারত সেক, কুটি মাতুব্বর, জান্নাত মাতুব্বর, সুর্য মাতুব্বর, আওলি মোল্লা, আতিকার মাতুব্বর, আকবর আলী, রাহেলা বেগম, আক্কাচ মাতুব্বর, সোনা মাতুব্বর, এ্যাডভোকেট চান মিয়া, শাহীন মাতুব্বর, উজ্বল মাতুব্বর।