গাজরের উপকারিতা
গাজরের উপকারিতা আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। স্বাস্থ্যরক্ষায় এবং সৌন্দর্যচর্চায়। গাজর যেমন দেখতে সুন্দর তেমনি স্বাদেও অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। গাজরের ইংরেজি Carrot এবং এটি একটি সবজি যা কাঁচা ও রান্না দুই অবস্থায়ই খাওয়া যায়।
এই সবজি শীতকালে বেশী পাওয়া যায় তবে সারা বছরও কম বেশী গাজর পাওয়া যায়। আজকের এই পোষ্টে আমরা (Health Daily 24) স্বাস্থ্যরক্ষা ও সৌন্দর্যচর্চায় গাজরের উপকারিতা সম্পর্কে বিভিন্ন দিক আলোচনা করব।
গাজর সম্পর্কে কিছু মজার তথ্য
পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক গাজর চীন দেশে উৎপাদিত হয়।
গাজরের আদি নিবাস দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং ইউরোপে।
গাজরের বৈজ্ঞানিক নাম Daucus carota
গাজরের অপর নাম সুপার ফুড বললেও ভুল হবে না।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কমলা রঙের ছাড়াও লাল, সাদা, হলদে নানা বর্ণের গাজর দেখা যায়।
গাজরের উপকারিতা জানার আগে পুষ্টিমান জেনে নেই!
সত্যি বলতে গাজরের পুষ্টিমান যদি সবার জানা থাকত তাহলে এর কেজি ২ হাজার টাকায়ও পাওয়া যেত না। আসুন জেনে নেই ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী গাজরের পুষ্টিগুণ।
গাজরে প্রধানত কোনটি পাওয়া যায় – শর্করা- ১০.৬০ গ্রাম, ভিটামিন বি ১ – ০.০৪ মি. গ্রাম, ভিটামিন সি- ৩.০০ গ্রাম, ক্যারোটিন- ১৮৯০.০০ মাইক্রোগ্রাম, খাদ্য শক্তি- ৪৮ ক্যালোরি, লৌহ- ২.২০ মি. গ্রাম, ফসফরাস- ৫৩০.০০ মি. গ্রাম, খনিজ পদার্থ- ১.১০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ৮০.০০ মি. গ্রাম। এছাড়া আপনি জেনে অবাক হবেন মুলার চেয়ে গাজরে ফসফরাস আছে ২৬ গুণ, ক্যারোটিন প্রায় ৬৩০ গুণ।।
গাজরের পুষ্টিগুণ জানা হয়ে গেল, তবে মাত্রাতিরিক্ত গাজর খেলে কেরোটিনিমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে চোখ হলদে হয়ে যেতে পারে। এবার স্বাস্থ্যরক্ষা ও সৌন্দর্যচর্চায় গাজরের উপকারিতা জেনে নেই।
ক্যান্সার প্রতিরোধে গাজর
গাজরে বিটা ক্যারোটিন থাকে। একটি জরিপে দেখা গেছে যে ব্যক্তিরা নিয়মিত বিটা ক্যারোটিন গ্রহণ করেন তাদের কোলন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পায়।
এছাড়া গাজরে আছে পলি-এসিটিলিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, যা ক্যান্সারের কোষ বাড়তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। নিয়মিত গাজর খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার, কোলোন ক্যান্সার ও ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কম থাকে।
তাই ক্যান্সার প্রতিরোধ মহিলা বা পুরুষ সবার জন্য গাজর অন্যতম খাবার উপকরন হতে পারে।
চোখের জ্যোতি বৃদ্ধিতে গাজর
প্রায় বলা হয় যে গাজর খাওয়া চোখের জন্য ভাল। এই বলার পিছনে সত্যতা আছে। গাজরের রস বিটা ক্যারোটিনের এক ভাল উত্স, এক প্রকার ভিটামিন যা সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির মধ্যে একটি। গাজর চোখের জ্যোতি বৃদ্ধিতে কার্যকারী ভুমিকা পালন করে। এছাড়া রাতকানা, গ্লুকোমা ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ করে।
হৃদরোগ প্রতিরোধে গাজর
আপনি জেনে অবাক হবেন গাজরের ন্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিএসিটিলিন হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়া নিয়মিত গাজর খেলে বিটা ও আলফা ক্যারোটিন রক্তনালী সংকোচন, অ্যাসিডিটির প্রকোপ কমায়।
ইনফেকশন কমাতে গাজরের ভুমিকা
সাধারনত শরীরের কোথায় কেটে বা ছিড়ে গেলে অনেক সময় ইনফেকশন হয়ে যায়। কাটা ছেঁড়া জনিত ইনফেকশন এড়াতে গাজর ব্লেড করে লাগিয়ে নিন।
বয়স ধরে রাখে গাজর
আপনি যদি নিয়মিত গাজর খান তাহলে আপনি বয়স কিছুটা ধরে রাখতে পারবেন। গাজর খেলে শরীরের কোষের ক্ষতি রোধ করা যায়। এছাড়া মাতৃকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গাজর বেশ ভূমিকা রাখে।
ত্বকের শুস্কতা দূর করে ও উজ্জল করে
ত্বকে যথেষ্ট পানি ও পটাশিয়াম না থাকলে ত্বক শুস্ক হয়ে যায়। আপনি যদি ১দিন পর পর গাজরের জুস বানিয়ে খেতে পারেন তাহলে পটাশিয়ামের অভাব দূর হবে এবং ত্বকের আদ্রতা ঠিক থাকবে। এছাড়া গাজরের থাকা ভিটামিন এ ও বিটা ক্যারোটিন ত্বক উজ্জল করে।
ব্রন মুক্ত চেহারার জন্য গাজর
গাজরের অন্যতম গুন এটি আপনার ত্বককে ব্রন মুক্ত রাখবে। এছাড়া যেখানে ব্রনের দাগ আছে সেখানে গাজরের রস লাগালে বেশ তাড়াতাড়ি ব্রনের দাগ থেকে আপনি রক্ষা পাবেন।
গাজর চুল পড়া রোধ করে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে
গাজরের উপকারিতা মধ্যে এটি অন্যতম। গাজরে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল চুল পড়া রোধ করে। এছাড়া চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুল আরো ঝলঝলে থাকে। গাজরে থাকা ভিটামিন বি ও ভিটামিন ই মাথার ত্বক ও চুলের গোড়ায় পুষ্টি প্রদান করে। এর ফলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং নতুন চুল গজারে সাহায্য করে।
শরীরের ওজন কমাতে গাজর
এছাড়া প্রতি সপ্তাহে ৫টি গাজর খেলে স্টোকের ঝুঁকি কমে। দাঁত ও মাড়ি রক্ষায় গাজর অনন্য। তাই স্বাস্থ্যরক্ষা ও সৌন্দর্যচর্চায় গাজরের উপকারিতা অপরিসীম।।