• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
করোনাকালের অর্থনীতি পথ দেখাতে পারে যে বই

এটা খুব দুঃখের বিষয় যে নীতিনির্ধারকদের কাছে জানুয়ারিতে জোশুয়া গানের ইকোনমিকস ইন দি এজ অব কভিড নাইন্টিন নামের বইটি ছিল না, যা তাদের এই ইস্যুটি বুঝতে সহযোগিতা করতে পারত। গান এই বইটি বেশ দ্রুতগতিতে মার্চে শেষ করেছেন। তিনি চেষ্টা করেছেন অর্থনৈতিক চিন্তাকে বিশ্লেষণ করার, যা কিনা নীতিনির্ধারণের জন্য জরুরি। প্রতিদিনই পরিস্থিতি ও জ্ঞানের ধরন বদলে যাচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিগুলোতে অনেক বিশ্লেষণের আর কোনো কার্যকারিতা থাকে না। এ অবস্থায় কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর অর্থনীতিবিদ জোশুয়া গান সাহসী এক পদক্ষেপ নিয়েছেন। শেষপর্যন্ত অর্থনৈতিক চিন্তার জন্য বিস্তৃত দিগন্তের প্রয়োজন হবে।

এই সংকট কিছু রাজনীতিবিদকে বাধ্য করেছে নিজেদের প্রবণতার বিরুদ্ধে যেতে, যা সম্ভব হয়েছে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এবং অর্থনৈতিক প্রণোদনার ঘোষণার মাধ্যমে। স্বাভাবিক সময়ে যা কিনা তাদের বিরোধী পক্ষের কাছেও অতিরিক্ত বলে বিবেচিত হতো। পুনরায় চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশগুলো চেষ্টা করেছে নিজেদের অর্থনীতিকে বন্ধ রাখতে এবং উচ্চমাত্রার ভর্তুকি প্রদান করে চালিয়ে নিতে।

এর সঙ্গে অবশ্য যুদ্ধকালীন অর্থনীতির পার্থক্য রয়েছে। তখন কার্যকলাপ অব্যাহত থাকলেও তা পুনর্নির্দেশিত থাকে। অন্যদিকে বর্তমান মহামারী পরিস্থিতিতে শ্রমশক্তি মারাত্মকভাবে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্যসেবা, খাবার ও পরিবহন কর্মীদের বাইরে রেখে বলা হয়েছে অন্যদের বাসায় বসে নিরাপদে কাজ চালিয়ে যেতে। এটি খুব সরলভাবে যে বিষয়টি সামনে রাখে তা হলো জীবন ও অর্থনীতি থেকে যেকোনো একটা বেছে নিতে হবে। যেহেতু অনেক দেশ এখন সংক্রমণের শিখর পেরিয়ে গেছে তাই আলোচনা নতুন মোড় নিয়েছে। অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে মানুষ কী ধরনের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পড়বে তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

এ আলোচনা হওয়ার প্রয়োজন আছে। তবে এর ফলে এ আলোচনা জীবন ও জীবিকার লড়াইয়ের দ্বৈত ধারণার মতো সহজবোধ্য হয়ে যেতে পারে। যা কিনা লকডাউন কার্যকর করার ক্ষেত্রে অস্বস্তিতে থাকা নেতাদের পক্ষে দাঁড়াতে পারে। গান দেখান যে এখানে ভুল হয়েছে। কভিড-১৯-এর উচ্চমাত্রার সংক্রমণ ও মৃত্যুহারের বিষয়টি শুরুর দিক থেকে পরিষ্কার ছিল। এমনকি প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চিত না হওয়া গেলেও কোনো ভারসাম্য সেখানে ছিল না। অর্থনীতির দিকে আরেকটু এগিয়ে যাওয়া মানে আরো কিছু মানুষের মৃত্যু। গান লিখেছেন, আপনি যদি জানেন যে আপনি শেষ পর্যন্ত দেশ লকডাউন করতে যাচ্ছেন, তবে দ্রুত এটি করার মধ্য দিয়ে বড় ফল লাভ সম্ভব।

গান যখন এসব লিখছিলেন তখন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র বেশ গড়িমসি করছিল। এটি স্বল্প সময়ের মধ্যে জীবন বাঁচানোর বিষয়ে ছিল না। গান লিখেন, জনস্বাস্থ্যের পথে হাঁটাই হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক কাজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

গানের মতে, বন্ধ করার এ সিদ্ধান্ত হতে হবে দৃঢ়, স্পষ্ট ও স্বচ্ছ। এখন যদি নেতারা সংকটের বিশালতাকে সেভাবে বিবেচনা না করে সত্যকে এড়িয়ে যান অথবা আচরণ পদ্ধতির কার্যকর নির্দেশিকার বদলে দুর্বল নির্দেশিকা জারি করেন তবে তা সম্ভব হবে না। পাশাপাশি ব্যক্তিও যদি সবসময়ের মতো এবং নিজের ইচ্ছামতো চলতে থাকেন তবে এটি কার্যকর হবে না।

তারপর প্রশ্ন আসে কীভাবে অর্থনীতি বন্ধ রেখে সংকট সমাধান করবেন। আবারো আদর্শের সঙ্গে বাস্তবতার দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে। যদি আপনার জরুরি ভিত্তিতে মাস্ক অথবা ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হয়, তবে এটিকে বিবেচনার বাইরে রাখার সুযোগ নেই। সে সঙ্গে বাজার প্রক্রিয়াকে ঠিক করতে দিন কীভাবে যোগাযোগ করবে এবং পণ্যটি আনতে হবে। এই সিদ্ধান্ত ও বরাদ্দ করতে হবে কেন্দ্রীয়ভাবে। যদি এতে অদক্ষতার ঝুঁকি থাকে তবুও।

এ অবস্থায় আপনি অর্থনীতির বেশির ভাগ খাতকে মরতে না দিয়ে কীভাবে বাঁচিয়ে রাখবেন? সরকারগুলো সাধারণভাবে বুঝতে পারে যে তাদের হারানো অর্থ পোষাতে তাদের সাহায্য করা উচিত। কিন্তু বিস্তারিত কাজটা সহজ নয়। এ বিষয়গুলো বিল প্রদান এবং ঋণ দেয়ার সুযোগ দেয়। যদিও এই খরচগুলো স্থগিত করা বা সরাসরি পুষিয়ে দেয়ার বিষয়টি এক নয়। গান বলেন খরচ, ভর্তুকি এবং ঋণ দেয়ার উদ্দেশ্য হবে, এটা নিশ্চিত করা যে মানুষের স্বল্পমেয়াদি বাধাগুলো যেন দীর্ঘমেয়াদি কষ্টে পরিণত না হয়। তিনি একটি পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, এ পেমেন্ট সরকার ট্যাক্সের মাধ্যমে আদায় করতে পারে।

অতীত কি কোনো নির্দেশনা দেয়? এ ক্ষেত্রে গান সাম্প্রতিক সময়ের মহামারী হিসেবে ১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জার ওপর চোখ রেখেছেন। সে সময়ের অর্থনৈতিক ফলাফল ভিন্ন ছিল, কারণ সেই মহামারী ঘটেছিল একেবারে বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপর। গান আফ্রিকার এইডস মহামারীর কথাও বলেছেন। যা কিনা অনেক অঞ্চলের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে ধ্বংসাত্মক ছিল। ফলে শ্রমশক্তি হ্রাস পেয়েছিল এবং অর্থনৈতিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছিল।

এখান থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে গান একটি ভালো কাজ করেছেন। তার মতে, আমাদের এখন টেস্টিংয়ে বিনিয়োগ করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ কে কাজে ফিরতে পারবে, সেটি ঠিক করা এবং কাজের জায়গা সুরক্ষিত করা। গান বলেন, যে দেশগুলো টেস্ট করা, আক্রান্তকে শনাক্ত করা এবং আইসোলেট করার কাজ দ্রুততার সঙ্গে করতে পেরেছে তারাই দ্রুততম সময়ে অর্থনীতি খুলে দিতে পেরেছে। তার মতে, আগামী কয়েক বছর টেস্টিং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে থাকবে।

তিনি কীভাবে ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে বরাদ্দ দিতে হবে, সে বিষয়েও আলোকপাত করেছেন। বিশেষ করে সে সময়ে যখন কিনা এটা সবার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। যদিও মানুষ যে এটি প্রত্যাখ্যান করতে পারে, সে বিষয়ে তিনি আলাপ করেননি, যা কিনা একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে।

নেচার ম্যাগাজিন

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।