ঢাকা, ২৪ আশ্বিন (৯ অক্টোবর) :
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মোঃ এনামুর রহমান বলেছেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, পরিশ্রম আর দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং নতুন নতুন কৌশলকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে আজ সারা বিশ্বের কাছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনুকরণীয় মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে ।
প্রতিমন্ত্রী আজ ঢাকায় সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোহসীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা’ ফ্রেন্ডশিপ’-এর জ্যেষ্ঠ পরিচালক কাজী এমদাদুল হক। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আতিকুল হক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহ মোহাম্মদ নাসিম
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দুর্যোগ সহনীয় টেকসই নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় পরিকল্পিতভাবে কাঠামোগত ও অবকাঠামোগত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে । বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা হতে মানুষের জানমাল রক্ষার্থে মাটির কিল্লা নির্মাণ করা হয়, যা সর্বসাধারণের কাছে মুজিব কিল্লা নামে পরিচিত । তারই আধুনিক রূপে উপকূলীয় ও বন্যা উপদ্রুত ১৪৮টি উপজেলায় ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান । উপকূলীয় দুর্গত জনগণ যেমন সেখানে আশ্রয় নিতে পারবে তেমনি তাদের প্রাণিসম্পদকে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারবে । এছাড়া জনসাধারণের খেলার মাঠ, সামাজিক অনুষ্ঠান ও হাটবাজার হিসেবেও এটি ব্যবহার করা যাবে ।
তিনি আরো বলেন, বন্যাপ্রবণ ও নদীভাঙন এলাকায় দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসে বন্যাপীড়িত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য দ্বিতল বিশিষ্ট ২৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে । এতে প্রায় ৯২ হাজার মানুষ এবং ২৩ হাজার গবাদি পশুর আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে । ২০১৮-২০২২ মেয়াদে ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে ।
সভাপতির বক্তৃতায় মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোহসীন বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে সিপিপি’র যাত্রা শুরু করেছিলেন যাঁরা আগাম সতর্কসংকেত প্রচার এবং সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের জানমাল রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে । বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনায় সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক সংখ্যা ৭৬ হাজার ২০ জনে উন্নীত হয়েছে । এই স্বেচ্ছাসেবকদের ৫০ শতাংশ নারী । তিনি আরো উল্লেখ করেন, পুরো দেশজুড়ে আধুনিক আবহাওয়ার রাডার এবং পূর্বাভাস ব্যবস্থা রয়েছে । উপকূলে ৫ হাজারের বেশি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে । জরুরি পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয় । দুর্যোগে প্রাণহানির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব বলেন, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারান । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বে সাম্প্রতিক কালে একই মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি একক সংখ্যায় নেমে এসেছে ।
এছাড়াও মুক্ত আলোচনায় সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা-সহ বিভিন্ন দুর্যোগকবলিত জেলার ২০ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ২০ জন এনজিও প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় আরো বেশিসংখ্যক ঘুর্ণিঝড় ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, লবণাক্ত এলাকায় সুপেয় পানির উৎস তৈরি ও সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা ও নদীভাঙন রোধে বৃক্ষায়ন-সহ বিভিন্ন কর্মসূচির সুবিধা ও চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরেন বক্তাগণ ।