• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
অতসীর খলখল হাসি [একটি ভ্রমনকাহিনী-২]

অতসীর খলখল হাসি
[একটি ভ্রমনকাহিনী-২]
———————————————–
।।রেজাউল করিম।।
————————————————
বাচ্চার জ্বর। এক নাগাড়ে দশ মাস চলছে। জ্বর একশো এক/ দুই ডিগ্রি থাকেই।

জ্বর মাপি। মাথা মোছাই। পানি পট্টি দেই। আমরা ঘেমে নেয়ে উঠি।
মেয়ের মা রাত জাগে আমার সাথে।

ভেলোর গমনের তাই একটাই উদ্দেশ্য ছিলো জ্বর কেন কমছে না মেয়ে অতসীর।

ফরিদপুর ও ঢাকায় নানা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছি।
ফলাফল জিরো। আমাদের মলিন মুখ আর চিকিৎসকদের ক্লান্ত বদন।

এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ও প্রেসক্রিপশনের কাগজে বোঝার ভার কেজি ছাড়িয়েছে। নাপা সিরাপ, এন্টিবায়োটিক আর এন্টিবায়োটিকের খালি বোতলের ভার ৫ কেজির বস্তা ভরে গেছে। সমাধান পাইনি কোনো।

ঢাকার ইউরোলজির এক মহা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সাহেব সাড়ে চার লক্ষ টাকার বাজেট ধরিয়ে দিয়ে ছিলেন অপারেশনের জন্য।

সমস্যা ধরা পরেছিলো তাঁর কাছে- “ইউরিন্যারি ট্র্যাক।” কেটে ক্যাথেটারাইজড করে দিবেন তাও তা রাখতে হবে এক বছর।

তিনি বললেন, “কোন গ্যারান্টি নাই বাঁচতেও পারে আবার উপরওয়ালা চাহেতো নিয়েও যেতে পারে।”

বলেনতো, এমন কথা কোন ভিক্ষুক বা ধণী বাপ মা সহ্য করতে পারে?

অবশ্য ভালো চিকিৎসকরা বোধ হয় এরকম সাফ কথা বলতে পছন্দ করেন। তাই তাঁদের অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে মর্মন্তুদ এমন বিষমাখানো কথার তীর ছোঁড়ে ভুক্তভোগীর বুকে !

এদিকে টাকার বাজেটের ভার জগদ্দল পাথরের মতো বেদনার ভার হয়ে চেপে ধরলো হতভাগ্য এ পিতামাতার বুকে। হতাশায় মুষড়ে পরি আমরা।

ওদিকে মেয়ের মুখের দিকে তাকালে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে আমার ও কেয়ার এই টানাটানির সংসারে।

যাই কোথায় আমরা!

তাই শ্রদ্ধেয় শ্রিপ্রাদি’র (অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী) পরামর্শ নেই। তিনিই ভেলোরের পথ বাতলে দিলেন।

এবার ধারকর্জ, বন্ধু -বান্ধবের সহযোগিতা ও দয়া দাক্ষিণ্য নিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম কাডপাঢি স্টেশন।

তারপর সোজা ভেলোরের
বিখ্যাত সেই হাসপাতাল ক্রিশিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

CMC হাসপাতালের ভর্তির পর একরাতের চিকিৎসায় চলে গেলো আমার মেয়ের দশ মাসের সেই জ্বর! খরচ হয়েছিলো সবমিলয়ে প্রায় আটশো রুপি মতন।

সারাক্ষণ চিৎকার করা মেয়েটি আমার বুকে চড়ে খলখল করে হাসলো। আমার আনন্দ ধরে না।
কী চিকিৎসা করেছিলেন সেখানের ডাক্তার সাহেবেরা ভেবে শুধুই আবেগে আপ্লুত হই।

আর সুদুর ট্রেন যাত্রায় ফাদারের মহানুভব আচরণ ও ভালবাসার চোখের জল আমাদের নামিয়ে দিয়েছিলো যে কাডপাডি স্টেশন মন ছুটে যায় তারই পানে।

আমরা বাংলাদেশের কোন ডাক্তারকে খাটো করছি না কিন্তু ভেলোরের চিকিৎসকদের সন্তোষজনক ব্যবহারের মুগ্ধতায় আমি আত্মতৃপ্তির পরমানন্দে মেতে উঠি। বলবো সে কথা পরের কিস্তি।
এখন চার বছর বয়সী জটিল সমস্যাগ্রস্থ আপাতত সুস্থ অতসী মেয়েটি আমার বুকে চড়ে শুধুই খলখল করে হাসছে।
[ চলবে]
✅ছবিটি সংগৃহীত ২০১২। সিএমসি এক লজ থেকে। ভেলোর।

লেখক :- সাংবাদিক রেজাউল করিম 

ফেসবুকে লাইক দিন

তারিখ অনুযায়ী খবর

এপ্রিল ২০২৪
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
« মার্চ    
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
দুঃখিত! কপি/পেস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।